কাজকেরিয়ার অনলাইন নিউজ ডেস্ক: আজ বুদ্ধপূর্ণিমা। রবীন্দ্রনাথের সমাজ চিন্তার মধ্যেও বুদ্ধের আদর্শের স্পর্শ ছিল। জানা যায়, ১৩৪২ সালে বৈশাখী পূর্ণিমায় কলকাতা মহাবোধি সোসাইটি হলে কবি আমন্ত্রিত ছিলেন। বুদ্ধ-জন্মোৎসব উপলক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দীর্ঘ ভাষণও দিয়েছিলেন। বিশ্ব সাহিত্যে তা আজ অমূল্য সম্পদ হয়ে রয়েছে। ব্রাহ্ম ও নিরাকার ব্রহ্মের উপাসক মূর্তি পূজার ঘোরতর বিরোধী। সেই রবীন্দ্রনাথের হৃদয়ে ভগবান বুদ্ধ।
তাঁর দৃষ্টান্ত একাধিক রয়েছে। কবিতা, গানে ও ভাষণে তা প্রকাশও পেয়েছে। আবার ধর্মতত্ত্ব আলোচনায় ভগবান বুদ্ধদেবকেই ‘অন্তরের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট মানব বলে উপলব্ধি’ করেছেন। তাঁর সৃষ্টির ভিতরে সে আভাস পাওয়া যায়। রবীন্দ্র-জীবনীকার কৃষ্ণ কৃপালনির সূত্রে জানা গিয়েছে, রবীন্দ্রনাথ বলেছেন— জীবনে একবার মাত্র একটি মূর্তির সামনে আমার প্রণত হওয়ার প্রেরণা জেগেছিল। সেটা বুদ্ধগয়ায়, যখন আমি বুদ্ধমূর্তি দর্শন করি।

রবীন্দ্রনাথের ওপর বুদ্ধের অপরিমেয় প্রভাব রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের পিতৃদেব মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ সহ তাঁর পরিবারের বুদ্ধের জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল। আজকের শ্রীলঙ্কা (পূর্বের সিংহল) বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতির বিশিষ্ট স্থান ছিল। জানা যায়, ১৮৫৯ সালে দেবেন্দ্রনাথ সিংহল ভ্রমণে যান। সঙ্গী ছিলেন পুত্র সত্যেন্দ্রনাথ ও ব্রহ্ম সমাজের অন্যতম কেশবচন্দ্র সেন। সিসি সময়ই বুদ্ধ চেতনা নিয়ে তাঁরা ফিরে এসেছিলেন। ঠাকুর পরিবারে তা চর্চার অন্যতম বিষয় হয়ে ওঠে।
বৌদ্ধ কালচারের প্রতি কবির অনুরাগ অত্যন্ত গভীর হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে জানা গিয়েছে, পৃথিবীর নানা প্রান্তের বৌদ্ধ পন্ডিতদের শান্তিনিকেতন-বিশ্বভারতীতে হাজির করেছিলেন। বিশ্বভারতীতে বৌদ্ধশাস্ত্র গবেষণার ব্যবস্থাও হয়। আবার ভারতীয় বৌদ্ধ পন্ডিতও ছিলেন একাধিক। বৈশাখী পূর্ণিমায় বুদ্ধ জয়ন্তী পালনেরও উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে জানা যায়। এমনকী, বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন তার বিখ্যাত দুটি গান– “হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী” ও “সকল কলুষ — তামস হর”।