কাজকেরিয়ার অনলাইন নিউজ ডেস্ক: এযেন এক উলট পুরানের কাহিনী। জল এখানে জীবন নয়, মৃত্যুর নামান্তর। সল্টলেক সেক্টর-১-এর এডি ব্লক। বাড়ির হোল্ডিং নম্বর-১৪৮। সেই বাড়ির সাবেক মালিক শ্রীমতী অপর্ণা বাসু। বাড়িটি তিনি বৈবাহিক সূত্রে পান তাঁর সম্প্রতি প্রয়াত শ্বশুরমশায় ডাক্তার গৌরীশঙ্কর বাসুর কাছ থেকে। ডাক্তারবাবু তাঁর জীবদ্দশায় বাড়ির দোতলার অংশটি চিত্তরঞ্জন ঘোষ ও মায়া ঘোষকে ভাড়া দেন। ২০০১-এর ডিসেম্বরে তিনি মারা যাবার পর একতলার অংশটি নিজের এক্তিয়ারে রাখেন তাঁর পুত্রবধূ অপর্ণা বাসু।
বিশেষ কয়েকটি কারণে শ্রীমতী বাসু সেই বাড়িতে থাকেন না প্রায় বছর পনেরো। ইতিমধ্যেই চিত্তরঞ্জন ঘোষও প্রয়াত হন। দোতলার ওই অংশে বর্তমানে শ্রীমতী মায়া ঘোষ, তাঁর পুত্র ভাস্কর ঘোষ ও পুত্রবধূকে নিয়ে বসবাস করেন। এদিকে শ্রীমতী বাসু যেহেতু অন্যত্র থাকেন তাই তিনি তাঁর একতলার অংশে একজন কেয়ারটেকার নিয়োগ করেন। তারপরই মায়া ঘোষ ও ভাস্কর ঘোষের উৎপীড়ন শুরু হয়। পাশাপাশি অপর্ণা বাসুকে ভাড়া দেওয়াও তাঁরা বন্ধ করে দেন। তা নিয়ে একাধিক মামলা বর্তমানে বিচারাধীন।
উৎপীড়নের একমাত্র অবলম্বন জলসংযোগ। শ্রীমতী বাসু কেয়ারটেকার নিয়োগ করার পরপরই মায়া ঘোষরা ওপর থেকে আসা একতলার সমস্ত জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। সবকটি পাইপ খুলে দেওয়া হয়। ফলে একতলার ওই কেয়ারটেকারকে দিনের পর দিন নির্জলা অবস্থায় দিন গুজরান করতে হয়। এভাবে বেশ কয়েক বছর চলার পর বছর খানেক আগে জলের অভাবে ওই কেয়ারটেকার ভদ্রলোক হার্টফেল করে মারা যান।
উল্লেখ্য, জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর অপর্ণা বাসুর তরফে বহুবার বহুভাবে দোতলার মায়া ঘোষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু আবেদন-নিবেদনেই কোনও কাজ হয়নি। আগের কেয়ারটেকার মারা যাওয়ার পর সুভাষ বোস নামে ওপর এক কেয়ারটেকারকে বহাল করেন শ্রীমতী বাসু। কিন্তু সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলতেই থেকে। শেষ পর্যন্ত অপর্ণা বাসু হাইকোর্টে একতলায় জলের পুনরসংযোগের জন্য একটি রিট আবেদন (5352 (W) of 2020) দাখিল করেন।
তার প্রেক্ষিতে গত ২৪ এপ্রিল মহামান্য বিচারপতি দেবাংশু বসাক বিধাননগর উত্তর থানার বর্তমান আধিকারিক সোমদেব ব্যানার্জীকে জলসংযোগের নির্দেশ দেন। তিনি তারপর থেকে বার কয়েক মায়া ঘোষ ও ভাস্কর ঘোষের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করলেও কোনও ফল হয়নি। বেশিরভাগ সময়ই অসুস্থ রোগী আছে এই আছিলায় কাউকে দোতলায় উঠতে দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ বিচারপতি বসাকের সেই নির্দেশ বাস্তবে কার্যকর করা যায়নি।
এরপর অপর্ণা বাসুর পক্ষে আইনজীবী সুপ্রতীক রায় পূর্বোক্ত রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আরেকটি মামলা (CPAN 326 of 2020 in WP No. 5352 (W) of 2020) করেন মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টে। গত ২ জুন সেই মামলার প্রেক্ষিতে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের নির্দেশে বিধাননগর উত্তর থানার আধিকারিক সোমদেব ব্যানার্জী ও সংশ্লিষ্ট থানার বাহিনীর উপস্থিতিতে রাতারাতি জলের সংযোগ দেওয়া হয় একতলায়। এই ঘটনায় আবার একবার পুলিশের তৎপরতা ও তাঁদের মানবিক মুখ ফুটে উঠলো।