কাজকেরিয়ার অনলাইন নিউজ ডেস্ক: এ এক নতুন রকম তোলাবাজির কাহিনী। তিনি সত্য রঞ্জন শীল ওরফে সোনা শীল। চাকরি করেন আরপিএফ কনস্টেবল পদে। থাকেন বাঁশবেড়িয়ার মিলনপল্লীতে। বহু কলঙ্কের নায়ক এই সোনা শীল বর্তমানে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তোলাবাজির কাজে।
সূত্রের খবর, সল্টলেকের ব্যবসায়ী তথা সজ্জন মধুসূদন চক্রবর্তী আর্ত-পীড়িত মানুষের সেবায় বিধাননগর নর্থ সোসাইটি ফর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার নামে একটি সমাজসেবী সংস্থা চালান। এছাড়াও তিনি ইন্টারন্যাশনাল হিউমান রাইট অর্গানাইজেশন নামে আন্তর্জাতিক স্তরের মানবাধিকার সংক্রান্ত একটি সংস্থা চালান। এহেন মধুসূদন চক্রবর্তীর কাছে দিনের পর দিন সমাজবিরোধী দুষ্কৃতী পাঠিয়ে সোনা শীল ১ কোটি টাকা তোলা চান বলে অভিযোগ।
মধুসূদনবাবু বলেন, ‘গত ১২ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ গুন্ডার মতো দেখতে অপরিচিত ৭-৮ জন লোক আমার সিএফ ব্লকের অফিসে আসে এবং আমাকে যারপরনাই শাসিয়ে আমার কাছে ১ কোটি টাকা দাবি করে। আমি তাদের দাবি মেটাতে পারিনি বলে বহু লোক মারফত নানাভাবে তারা আমাকে শাসাতে থাকে। এমনকি প্রাণহানির হুমকিও দেয়। তারা বলে এই রাজ্যে এমন কোনো লোক নেই যে আমাদের সোনাস্যারের কিছু করতে পারে।’
প্রসঙ্গত, সোনা শীলের লোকেরা বলে বেড়ায় যে এ রাজ্যের প্রশাসন, পুলিশ, মাফিয়া সবই তার হাতের মুঠোয়। উল্লেখ্য, এই ঘটনা সবিস্তারে জানিয়ে মধুসূদনবাবু ১৩ এপ্রিল বিধাননগর উত্তর থানায় একটি অভিযোগ করেন। তারপর ১৫ এপ্রিল তিনি বিধাননগর কমিশনারেটের নগরপালকেও বিষয়টি ই-মেল করে জানান। তারপর একপ্রকার বাধ্য হয়েই মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। এবং তারপরই একটি এফআইআর দায়ের করা হয়। যার নম্বর হল — Bidhannagar North PS Case No. 67/2020.

মধুসূদনবাবু আরও জানান, ২০১৮ সালেও একইভাবে এই সোনা শীল তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। সেই সময়ও মধুসূদনবাবু আইনের ওপর ভরসা করেন এবং বিধাননগর উত্তর থানার দ্বারস্থ হন। বিধাননগর উত্তর থানা থেকে সোনা শীলের বিরুদ্ধে 107 Cr.PC ধারায় একটি মামলা করেন যা এখনও চলছে।
কে এই সোনা শীল? জানা গিয়েছে, ইনি একাধারে ব্যাঙ্ক জালিয়াত, গাড়ি চোর, মাফিয়া ডন, আরপিএফ কনস্টেবল- এমনই আরো অনেক কিছু। কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিকে উনি ব্যবহার করেন গয়না হিসেবে আর লিপ্ত থাকেন উল্লেখিত নানা দুষ্কর্মে। ২০০৬ সালে পাইকপাড়ার রিঙ্কু দত্ত ও টবিন রোডের দেবাশীষ দেকে সঙ্গী করে তিনি স্টেট ব্যাঙ্কের বি টি রোড শাখায় ব্যাঙ্ক জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েন। তার পরবর্তীতে এক সঙ্গী দেবপ্রিয় ব্যানার্জীর সঙ্গে জড়ান অন্যের গাড়ি বেআইনিভাবে হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায়।
তোলাবাজির মৃগয়াক্ষেত্র হিসেবে সম্প্রতি তিনি বেছে নিয়েছেন সল্টলেককে। পরবর্তীতে দীর্ঘকাল তিনি খবরের শিরোনামে ছিলেন না। আরও জানা গিয়েছে, এই সোনা শীল সল্টলেকের এক জনৈক গাড়ি ব্যবসায়ীর সঙ্গে লিপ্ত হন গাড়ি ভাড়ার ব্যবসায়। নিজের পারিপার্শ্বিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় জমিয়েছেন তিনি। শোনা যায় কলকাতার একাধিক বিলাসবহুল কমপ্লেক্সে তার ফ্লাট রয়েছে। নামে-বেনামে দামি গাড়িও রয়েছে বেশ কয়েকটি।
ইদানিংকালে তিনি দু’দুটো রিভলভার এবং ৮-১০ জন দেহরক্ষী সঙ্গে নিয়ে চলাফেরা করেন। তিনি কথায় কথায় বলেন দুটি রিভলভারই তার সার্ভিস রিভলভার। এহেন দুর্ধর্ষ সোনা শীলের হাত থেকে রক্ষা পেতে সল্টলেকের ওই ব্যবসায়ী তথা সমাজসেবী ও মানবাধিকার সংগঠনের কর্ণধার ইতিমধ্যেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। সোনা শীলের বিপুল ক্ষমতা এড়িয়ে রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসন কী পদক্ষেপ করেন সেটাই এখন দেখার।