কাজ কেরিয়ার নিউজ ডেস্ক, নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়পুর: দিল্লিতে বিশ্বব্যাপী শিল্পোদ্যোগ সম্মেলনে রায়পুরের যুবক সুধাংশু আগরওয়াল। আগামী ১৪ই মার্চ দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিশ্বব্যাপী শিল্পোদ্যোগ সম্মেলন। বহু শিল্পপতিরা সেখানে উপস্থিত থাকবেন। উপস্থিত থাকবেন আরও বহু বিশিষ্ট জনেরা। কিন্তু সেদিনের ফোকাস লাইট যার ওপর সব থেকে বেশি থাকবে তিনি মাত্র ২৭ বছর বয়সী রায়পুরের যুবক সুধাংশু আগরওয়াল। নতুন নতুন উদ্ভাবনার জন্য আমাদের দেশ বর্তমানে প্রাচ্যের দেশগুলির থেকে অনেকটাই এগিয়ে, যার চাক্ষুস প্রমান সুধাংশু আগরওয়াল। বলা বাহুল্য তিনি USA থেকে ৪০ লক্ষ টাকার চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে এসেছেন দেশবাসীর কথা ভেবে।

‘আমার বাংলা’-র প্রতিনিধিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, USA তে তিনি মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করতেন। পড়াশোনা চলাকালীন তিনি সেখানের একটি স্থানীয় পিৎজা রেস্টুরেন্টে পার্ট টাইম কাজ করতেন। সেখানে তিনি লক্ষ্য করেছেন যে সেখানের স্থানীয় মানুষেরা স্বাস্থকর পানীয় অর্থাৎ হেলথ ড্রিঙ্ক বেশি পান করেন। তখন থেকেই ভাবনা নিজের দেশের মানুষের জন্য কিছু করার। তারপর পড়াশোনা শেষ করে তিনি শিকাগোতে একটি কোম্পানিতে ভারতীয় মুদ্রার ৪০ লক্ষ টাকার চাকরিতে যোগ দেন। চাকরি করা কালীন নতুন উদ্ভাবনার কথা তাঁর মাথায় জাকিয়ে বসে। তিনি কিছুতেই নিজের চাকরিতে মন বসাতে পারেন নি। তারপরেই তিনি চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন। তাঁর বাবা ডাক্তার সুভাষ আগরওয়াল এবং মা ডাক্তার মনিকা আগরওয়াল দুজনেই রায়পুরের নামকরা ডাক্তার। তার বাবা-মা কেবল ডাক্তারই নন, তাঁরা দুজনেই সমাজসেবার সাথে যুক্ত। তাই তাঁরা ছেলের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসে তিনি পরিবারের থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে এবং নিজের চাকরির জমানো টাকা দিয়ে স্বাস্থকর পানীয় অর্থাৎ হেলথ ড্রিঙ্ক বানানো শুরু করেন। সাফল্য আসতে সময় লাগে ৬ মাস। তিনি আরও বলেছেন, আমাদের দেশে যে সমস্ত স্বাস্থকর পানীয় অর্থাৎ হেলথ ড্রিঙ্ক আছে সেগুলিতে সুগার এবং কোলেস্টোরলের ভাগ অনেকটাই বেশি তাই তিনি সুগার এবং কোলেস্টরোল ছাড়া পানীয় তৈরিতে উদ্যোগী ছিলেন। তারপর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে তিনি নিজেই নিজের প্রোডাক্টের মার্কেটিং শুরু করেন। প্রথমে মুম্বাই তারপর পুনে, তারপর একে একে ম্যাঙ্গালোর, রায়পুর, কলকাতা, শিলিগুড়ি এবং গুয়াহাটিতে তিনি মার্কেটিং করেন এবং বর্তমানে এইসব জায়গার ক্রেতাদের থেকে তিনি ব্যাপক সারা পেয়েছেন। এখন তিনি ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই এবং দিল্লিতে নিজের প্রোডাক্টের মার্কেটিং করতে চলেছেন। এখনও পর্যন্ত কেবলমাত্র মুম্বাইতেই প্রোডাকশন চলছে তবে ধীরে ধীরে দেশের সব রাজ্যেই তিনি প্রোডাকশন শুরু করবেন যাতে তিনি ক্রেতাদের হাতে আরও কম দামে প্রোডাক্ট তুলে দিতে পারেন। এই কাজে তাঁকে তাঁর বাবা-মা যতটা সাহায্য করছেন ততটাই এগিয়ে এসেছেন তাঁর বন্ধু অনুরাগ মোহান্তা।
এখনও পর্যন্ত তাঁর কোম্পানিতে ৫টি ফ্লেভারের স্বাস্থকর পানীয় অর্থাৎ হেলথ ড্রিঙ্ক তৈরী হচ্ছে। কিন্তু তিনি চেষ্টা করছেন যাতে ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন স্বাদের পানীয় তৈরী করতে পারেন। তবে এর মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো পানীয়র স্বাদ। সম্পূর্ণ এলকোহোল ছাড়া এই পানীয়ের স্বাদ অবিকল বিয়ার-এর মতোই। দেশের লোকেদের যাতে এলকোহলের দিক থেকে আসক্তি কমে তাই তাঁর এই উদ্ভাবনা।
তিনি তাঁর কোম্পানির নাম রেখেছেন থ্রি সিস্টার্স (3 SISTERS)। তবে সব থেকে বড় সাফল্য হলো ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই পর্যন্ত তাঁর বার্ষিক টার্নওভার ২.৫ কোটি। হিসেবে করে দেখা গেছে প্রতি মাসে তাঁর ব্যবসা ১৫% করে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই অনুসারে হিসেবে করলে দেখা যাবে আগামী অর্থবর্ষে তাঁর ব্যাবসার টার্নওভার ৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এখন অপেক্ষা শুধু সময়ের। সারা দেশবাসী এখন তাঁকে সাফল্যের শৃঙ্গে দেখতে চায়।