কাজকেরিয়ার অনলাইন নিউজ ডেস্ক: করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বুঝিয়ে দিল অনেক কিছুই। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল ভিন্ন ধর্মের দিকেও। ভাঙড়ের কাশিপুরের কিছুটা দূরে বাঙালবেড়েতে ক্ষুধার্ত দম্পতির পাশ দাঁড়ালেন মুসলিম যুবকরা। লকডাউনের জেরে পুজোপাঠ শিকেয়। উপার্জনও নেই ব্রাহ্মণের। মুড়ি খেয়ে দিন কাটছে বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ দম্পতির। প্রশাসনের কেউ নজর না দিলেও পাশ দাঁড়িয়েছেন এলাকার কিছু মুসলিম যুবক। তাঁরাই চাঁদা তুলে চাল-ডাল কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তবে তাও ফুরিয়ে এসেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, বাঙালবেড়ের ঘোষপাড়া ও মোল্লাপাড়ার মাঝখানে একটি জায়গায় কোনওরকমে বাস করছেন পূর্ণেন্দু শেখর মুখার্জী ও তাঁর স্ত্রী ললিতা বালা। চট, বস্তা ও প্লাস্টিক দিয়ে কোনও মতে মাথা গোঁজার ঠাঁই। ছেলেদের নির্যাতনে ঘর ছেড়েছেন ৮০ বছর উত্তীর্ণ ওই বৃদ্ধ স্ত্রীর হাত ধরে। আশ্রয় নিয়েছে একপ্রকার জঙ্গলেই। যানবাহন বন্ধ থাকায় পোলেরহাটে গিয়ে পুজোও করতে পারছেন না পূর্ণেন্দু শেখর। ফলে রোজগারপাতিও নেই।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেল, কাশিপুরের যুবক জিয়াউল মোল্লা, আজান আলি, আবু তালেব, মফিজুলরা পাশে দাঁড়িয়েছেন। জিয়াউল ৫০০ টাকা বৃদ্ধের হাতে তুলে দিয়েছেন। তাঁরাই উদ্যোগ নিয়ে ১,১০০ টাকা চাঁদা তুলে দিয়েছেন তাঁদের হাতে। আত্মীয়-স্বজনরা যখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, তখন ভিন্ন ধর্মের মানুষের এই সাহায্যে স্বাভাবিকভাবেই খুশি ওই দম্পতি। একপ্রকার চোখের জল মুছতে মুছতে প্রায় ৭৫ বছরে পা রাখা বৃদ্ধা ললিতা বালা জানিয়েছেন, ঘরে খুদ-কুঁড়োও নেই। ক্লাবের ছেলেরা যে চাল দিয়েছিল তা শেষ হয়ে গিয়েছে। ৩ দিন ধরে আমরা মুড়ি-জল খেয়ে আছি। জীবজন্তুর ভয়ে এখানে কেউ আসে না। কার কাছে দুঃখের কথা জানাব। জঙ্গলে ঘর বাঁধার নেপথ্যে রয়েছে আরও করুন কাহিনী।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউল মোল্লা জানিয়েছেন, এখন সব মানুষ কষ্টের মধ্যে আছেন। ওঁদের অভাব দেখে চোখে জল এসে গিয়েছিল। প্রশাসনকে অনুরোধ করছি বৃদ্ধ দম্পতির পাশে দাঁড়ানোর জন্য। অন্যদিকে ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকার বিডিও কৌশিক কুমার মাইতি জানিয়েছে, ওঁদের দুরবস্থার কথা জানা ছিল না। চাল-ডাল পাঠাচ্ছি। ভাতের অভাব হবে না ওঁদের।