আমার বাংলা অনলাইন নিউজ ডেস্ক: ভারতীয় ফুলবলে সর্বকালে সেরাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন চুনী গোস্বামী। এই ফুটবল আইকন বাংলা ও দেশের জন্য অনেক পুরস্কার এনেছেন। দেশপ্রিয় পার্কের মাঠে প্রথম ফুটবল খেলা শুরু করেছিলেন চুনী। ১৯৫৮ সালের ২৬ মে ভারতীয় ফুটবল দলে তাঁর অভিষেক হয় টোকিও এশিয়ান গেমসে বার্মার বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে। গোলও করেছিলেন। ভারত জয়ী হয় ৩-২ ফলাফলে। ভারতের হয়ে ৩৬টি ম্যাচ খেলার নজির রয়েছে তাঁর। অধিনায়কত্ব করেছেন ১৬টি ম্যাচে। গোল সংখ্যা ১৩।

জাকার্তা এশিয়ান গেমসে সোনা জয়ী ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। সেমিফাইনালে সাউথ ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে চুনী গোস্বামীর জোড়া গোল রয়েছে। ১৯৬৪ সালে এশিয়া কাপে রানার্সও হয় ভারত। আবার বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফি খেলেছেন ১৯৫৫-১৯৬০ সাল অবধি। ২৫টি গোলও করেছেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন ৩ বার। ১৯৫৮ ও ১৯৬২ এশিয়ান গেমস জাকার্তায় অধিনায়ক ছিলেন। ১৯৫৯ সালে এন্নাকুলাম, ১৯৬৪ সালে তেলঅভিভ-এশিয়া কাপ খেলেছেন। প্রাক-অলিম্পিক পর্বে ১৯৫৯ কাবুল, ১৯৬০ কলকাতা, ১৯৬৩ কলম্বো ও ১৯৬৪ তেহরানে খেলেছেন। ১৯৬০ সালে অলিম্পিক, মারডেকা কাপ ১৯৬১ ও ১৯৬৪ সালে খেলেছেন।

মোহনবাগান ক্লাবের হয়ে ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত খেলেছেন। ৫ বার অধিনায়ক ছিলেন। মোহনবাগানে তাঁর গোল সংখ্যা ২০০টি। কলকাতা ফুটবল লিগে ১৪৫, শিল্ডে ২৫, ডুরান্ডে ১৮ ও রোভার্সে ১১টি গোল রয়েছে। ট্রফি জয়ী হয়েছেন কলকাতা ফুটবল লিগ ৯ বার, শিল্ড ৫ বার, ডুরান্ড ৫ বার, রোভার্স ৩ বার। এছাড়া অন্যান্য টুর্নামেন্টেও অংশ নিয়েছিলেন। উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে টানা ৪ বার কলকাতা লিগ জয় (১৯৬২-১৯৬৫)। আইএফএ শিল্ড জয় টানা ৩ বার (১৯৬০-১৯৬২)। ডুরান্ড কাপ জয় ৩ বার (১৯৬৩-১৯৬৫)। মোহনবাগানের হয়ে অধিনায়ক হিসেবে ১৪টি ট্রফি জয়ের সাফল্যও রয়েছে।
১৯৮৩ সালে সালে পদ্মশ্রী সম্মান পান। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জৈল সিংয়ের হাত থেকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৬৩ সালে অর্জুন পুরস্কার পান। ২০০৫ সালে মোহনবাগান রত্ন সম্মান পেয়েছেন। আবার ওই সালেই ‘কলকাতা শেরিফ’। ২০১৩ সালে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান পেয়েছেন চুনী গোস্বামী। রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের হাত থেকে মোহনবাগান জার্সিতে পুরস্কার নেওয়ার সৌভাগ্যও হয়েছে তাঁর। শুধুমাত্র ফুটবলার ছিলেন না, কিংবদন্তী ক্রীড়া ব্যক্তিত্বও ছিলেন চুনী। বিশ্ব ফুটবলে সম্রাট পেলে যে মর্যাদা পেয়েছিলেন, ভারতীয় ফুটবলে সেই মর্যাদা পেয়েছেন তিনি। পেলের সঙ্গে ২ বার কলকাতাতে মুখোমুখি হন চুনী। একবার কসমস ম্যাচে, অন্যবার একটি অনুষ্ঠানে।

ফুটবলের পাশাপাশি দক্ষ ছিলেন ক্রিকেট, টেনিসেও। বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলেছিলেন ১৯৬২-১৯৭২ সাল পর্যন্ত। আবার ১৯৭১-৭২ মরশুমে বাংলা ক্রিকেটে অধিনায়কও হন। দলীপ ট্রফিতে পূর্বাঞ্চলের হয়েও খেলেছিলেন। ১৯৬৬-৬৭ সালে নাগপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খেলেছিলেন পূর্বাঞ্চলের হয়ে। ৪৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার কৃতিত্ব রয়েছে। মোট রান সংখ্যা ১,৫৯২। সেঞ্চুরি রয়েছে ১টি। হাফ সেঞ্চুরি ৭টি। সর্বোচ্চ রান ১০৩। বোলার হিসেবেও উইকেট নিয়েছেন ৪৭টি। সেরা বোলিং পারফরম্যান্স ৫/৪৭।
টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমির ডিরেক্টর হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবরে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শোকবার্তা এসেছে। অসাধারণ ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও মোহনবাগানের নয়নের মণি হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল।