কাজকেরিয়ার অনলাইন নিউজ ডেস্ক: দেশব্যাপী লকডাউনের আবহে সব মানুষেরই প্রতিদিনের জীবনে বিরাট প্রভাব ফেলছে। দীর্ঘদিন লকডাউন চলার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে আলস্য ও কর্মবিমুখতা গ্রাস করে নিচ্ছে। এইসময় পড়ুয়া থেকে চাকরিজীবী সবাই মোবাইলেই ডুবে থাকছেন। মোবাইল আসক্ত হয়ে পড়ার প্রবণতাও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞ মনোবিদরা মনে করছেন, এই আসক্তি ভবিষ্যতে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ ব্যাহত করবে।
অন্যদিকে, শিশু-কিশোরদেরও এই পরিস্থিতিতে মন বিষণ্ণ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। স্কুলের বন্ধু, টিফিনের মজার জগৎ, খেলাধূলা, ক্লাস রুমের আনন্দ একেবারেই নেই। অনলাইন ক্লাসে অভ্যাস না থাকলেও বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে ছোটদের মন অশান্ত হওয়াই স্বাভাবিক। বিশেষজ্ঞ মনোবিদরা আর জানিয়েছেন, কৈশোরে বিভিন্ন অজানা বিষয়ে আকর্ষণ জন্মে থাকে। এক্ষেত্রে বন্ধু-বান্ধব, স্কুল-কলেজ, কোচিং সেন্টার, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল সহ নানা বিষয়ের হাতছানিও থাকে। এই পরিস্থিতিতে তাঁরাও গৃহবন্দি। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ ব্যাহত হচ্ছে। তাই ভাল না থাকাটাই স্বাভাবিক।

আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবারই একই অবস্থা। কারও কারও কাজকর্ম ও চাকরি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে টেনশন। একঘেঁয়ে পরিস্থিতির মধ্যে লড়াই করতে হচ্ছে গৃহবন্দি থেকে। লকডাউনে সবাই বাড়িতে। জট-জটিলতাও বাড়ছে গৃহবন্দি জীবনে। বিশেষজ্ঞ মনোবিদরা এক্ষেত্রে জানিয়েছেন, এইসময় মনকে শান্ত রাখতে হবে। জীবন থেকেই খুঁজে নিতে হবে আনন্দে থাকার উপাদান। এইসময় পরিবারের প্রত্যেককে নিজস্ব স্পেস দেওয়াটা খুব জরুরি। বাড়ির বয়স্ক ও ছোটদেরও কিছুটা সময় নিজের মতো করে কাটাতে দিতে হবে। তর্ক-বিতর্ক, মনোমালিন্য যাতে না বাড়ে সেদিকেও নজর দেওয়া চাই।
দিনের মধ্যে কোনও একটা সময়ে পরিবারের সবাই মিলে মজা করে কাটাতে পারেন। বাড়ির কাজকর্ম ও পড়া-লেখার বাইরে ১-২ ঘন্টা সবাই একসঙ্গে আনন্দে কাটালে মনটা ভাল থাকবে। আবার সংক্রমণের এই বিপর্যস্ত পরিস্থিতির খবর শুনে শুধুই মন ভারাক্রান্ত করবেন না। বাড়ির বয়স্ক ও ছোটদের মধ্যে যাতে আতঙ্ক না ছড়ায় সেদিকটাও দেখুন। এইসময় মনকে শান্ত রাখতে হালকা কোনও গান শুনতে পারেন। যেমন– রবীন্দ্রসঙ্গীত বা ওয়েস্টার্ন মিউজিক। তবে উদ্দাম ও উত্তেজক বিষয় আদৌ নয়।

বাড়ির কাজ সবাই ভাগ করে নিয়ে করুন। এই অবসরে স্মার্ট ফোন থেকে পছন্দের কিছু শিখে নিতে চেষ্টা করুন। সেটি স্পোকেন ইংলিশ বা কুকিংও হতে পারে। কাজের চাপে আপনার যে বিশেষ গুণ এতদিন চাপা পড়েছিল, তার চর্চা শুরু করুন। যেমন — পেন্টিং, সেলাই, হাতের কাজ, কবিতা লেখা প্রভৃতি। এই সংক্রমণের সময় খাদ্য তালিকার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিন। শরীর সুস্থ রাখতে একসঙ্গে বাড়ির সবাই মিলে যোগব্যায়াম বা প্রাণায়াম করতে পারেন। হতাশা ও অবসাদ কাটাতে বা মনকে শান্ত করতে মনোসংযোগ বাড়ানোর জন্য যোগব্যায়াম বা প্রাণায়ামের গুরুত্ব রয়েছে।
বিশেষজ্ঞ মনোবিদরা আরও জানিয়েছেন, যাঁরা কাজকে উপভোগ করেন, তাঁরা দিনের শেষে একটা অদ্ভুত আত্মতৃপ্তি পেয়ে থাকেন। ঘরে বসে ঘনবন্দি জীবনে মনকে নানা কাজের মধ্যে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করুন। অবসাদ আসছে, ডিপ্রেশন বাড়ছে, এইসব ভাবনা মন থেকে দূর করুন। বাড়িতেই কাজের পরিবেশ তৈরি করে সুস্থ থাকতে চেষ্টা করুন।