কাজকেরিয়ার অনলাইন নিউজ ডেস্ক: হিন্দি থিয়েটারকে বাংলায় জনপ্রিয় করার নেপথ্যে ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। রঙ্গকর্মী-র প্রতিষ্ঠাতা-নির্দেশক ও অভিনেত্রী আজ আর নেই। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম হয়েছিল রাজস্থানের যোধপুরে। ছোটবেলায় ভরতনাট্যমের তালিম নিয়েছিলেন। কলকাতায় শ্রীশিক্ষায়তন কলেজে হিন্দি সাহিত্য নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। স্নাতকোত্তরের পর হিন্দি শিক্ষিকা হিসেবে ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি কলেজ অধ্যাপনাও করেন।
ওই সময় থেকেই শুরু হয় মূলত তাঁর নাট্যচর্চার জীবন। সত্তরের দশকে শূদ্রকের “মৃচ্ছকটিক” অবলম্বনে তৈরি নাটক “মিট্টি কী গাড়ি”তে অভিনয় দিয়ে শুরু করেছিলেন। ওইসময় তৃপ্তি মিত্র, মৃণাল সেনদের তিনি পান মেন্টর হিসেবে। এরপর ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন “রঙ্গকর্মী” নামে নিজস্ব নাট্যদল। ১৯৮০ সাল থেকে পরিচালকের দায়িত্বভার নিয়েছিলেন।
জানা যায়, তৃপ্তি মিত্রের নির্দেশনায় ইবসেনের “আ ডলস হাউস” অবলম্বনে নাটক “গুড়িয়া ঘর”-এ তাঁর অভিনয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার এনে দিয়েছিল। আশির দশক থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে “রঙ্গকর্মী” দর্শকদের একের পর এক নাটক উপহার দিয়েছিল। যেমন– “মহাভোজ”, “রুদালি”, “কোর্ট মার্শাল”, “অন্তর্যাত্রা” সহ একাধিক প্রযোজনা।

১৯৯৮ সালে সঙ্গীত-নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কারে সম্মানিত হন ঊষাদেবী। ২০০৬ সালে লাহোরের নাট্যোৎসবে “রুদালি” মঞ্চস্থ হয়েছিল তাঁর প্রযোজনায়। রাজ্যে হিন্দি নাটকের নিজেস্ব দর্শক তৈরি করতেও সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। বাংলার নাটককে পৌঁছে দিয়েছিলেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মঞ্চেও। সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কথা মঞ্চে তুলে ধরার প্রয়াস ছিল তাঁর। আবার ঋতুপর্ণ ঘোষের “দ্য রেনকোট” ছবির চিত্রনাট্যে সহযোগী হিসেবেও কাজ করেছিলেন তিনি।
১ এপ্রিল “রঙ্গকর্মী”র সাম্প্রতিকতম প্রযোজনা “সরহদেঁ” মঞ্চস্থ হওয়ার কথা থাকলেও লকডাউনে তা স্থগিত হয়। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নাট্য-শিল্পী মহলে। কলকাতায় নিজের বাড়িতে আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রঙ্গমঞ্চের একনিষ্ঠ কর্মী ঊষা-র জীবনাবসান হল।