কাজকেরিয়ার নিজস্ব প্রতিনিধি : মা-ঠাকুমাদের মুখে আগে শোনা যেত “সব তীর্থ বার বার, গঙ্গাসাগর একবার।” প্রাচীন আমল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের এই তীর্থক্ষেত্রের অতীত গৌরব রয়েছে। এই মুহূর্তে গঙ্গাসাগরে পারদ নিম্নমুখী। শীতের পরশ মেখে সাধু থেকে পুণ্যার্থীরা সাগরমুখী। যাত্রীনিবাসগুলিতে ক্রমশ ভিড় বাড়ছে।
এই মেলা ঘিরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন তৎপর। জল-স্থল ও আকাশ পথে নিরাপত্তা বলয়। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার প্রান্ত ছাড়াও ভিন প্রদেশের বহু মানুষের সমাগম। দূর-দূরান্তের মানুষের উপস্থিতি। হরিদ্বার, বেনারস, বারানসী, প্রয়াগ সহ সমগ্র উত্তর ভারত থেকে মানুষের সমাগম ঘটছে।
কুম্ভমেলার পর গঙ্গাসাগর মেলা দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা হিসেবে পরিচিত। এই স্থানটি হিন্দুদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র তীর্থ। প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির দিন এখানে বহু মানুষ তীর্থস্নান করতে আসেন। বিহার-উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত অবাঙালি পুণ্যার্থীদের ভিড়ে জমজমাট সাগর মেলা।
স্থানীয় ভাবে কথিত রয়েছে,এখানে কপিলমুনির আশ্রমকে ঘিরে এই ঘটনা প্রচলিত। একসময় কপিলমুনির ক্রোধাগ্নিতে সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র ভস্মীভূত হয়। তাঁদের সেই আত্মা নরকে নিক্ষিপ্ত হয়। এরপর সগরের পৌত্র ভগীরথ স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে নিয়ে এসে সগরপুত্রদের ভস্মাবশেষ ধুয়ে ফেলেছিলেন। সেই সব আত্মাকেও মুক্ত করেছিলেন। রামায়ণ-বালকাণ্ড, ৪৩ অধ্যায়ে তার উল্লেখও পাওয়া যায়।
পাশাপাশি মহাভারতের বনপর্বে তীর্থযাত্রা অংশে গঙ্গাসাগর তীর্থের উল্লেখ করা হয়েছে। আবার পালবংশের রাজা দেবপালের একটি লিপিতে গঙ্গাসাগর-সঙ্গমে ধর্মানুষ্ঠান করার কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। স্থানীয় ভাবে এ বিষয়ে আরও জানা যায়, এই অঞ্চল সমূহে মন্দিরতলা, ধবলাট, মনসাদ্বীপ, হরিণবাড়ি, সুমতিনগর ও মহিষমারি প্রভৃতি অঞ্চলে অনেক নিদর্শন পাওয়া যায়।
ভূগর্ভস্থ পাকাবাড়ি, দেবালয়, পাতকুয়ো, চৌবাচ্চা, চাতাল, নৌকা মুদ্রা-অলঙ্কার সহ বিষ্ণুমূর্তি ও জৈনমূর্তি প্রভৃতি নিদর্শন পাওয়া থেকে অনেকেই এই সত্য মেনে চলেন। এমনকী রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজকীয় দুর্ধর্ষ নৌ-বহরের ঘাঁটি ছিল বলেও আন্দাজ করা হয়। (ছবি: সংগৃহীত)